ঢাকাই ছবির অভিনেতা অনিক রহমান অভিকে নয় মাস আটকে রেখে যৌ’ন নি’র্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধন শারীরিক ও যৌ’ন নি’র্যাতন করতেন অভিকে। ওই মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এই অভিনেতাকে উদ্ধারের পর জানা যায় আরো ভয়াবহ কাহিনি। সেখানে নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে যে ভয়াবহ নি’র্যাতন চালানো হতো তার বর্ণনা করেছেন অভি নিজেই।
এই অভিনেতা ওই মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, আমি জানি ওরা এভাবে আমাকে শেষ করে ফেলবে। যাদের টাকা আছে তাদের চিকিৎসার নামে আটকে রেখে চাঁদা আদায় করতে থাকে। যারা গরিব তাদের বেশিদিন রাখা হয় না। কারণ তাদের রেখে লাভ নেই। আমি এমন একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করি যে সুস্থ হয়ে বাইরে গিয়ে ফের ফিরে আসে। এসময় সে ফোন নিয়ে আসে, তাকে আমি বলি আমার প্রাণ ভিক্ষা দাও। আমাকে হেল্প করো, নাহলে এখানে আমি মারা যাব। সে আসার পর তার ফোনটা আমি হাতে পাই।
এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘একদিন ভোর ৫ টার দিকে আমি কিচেনে মোবাইল নিয়ে গিয়ে আমার বন্ধু অভিনেতা জয় চৌধুরীকে ফোন দেই। তাকে আমি বলি আমার প্রাণ বাঁচাতে। সে বুঝতে পারে। জায়েদ খানের সঙ্গে কথা বলে। এরপর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি র্যাবে অভিযোগ জানায়। এরই প্রেক্ষিতে ওখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে।’
সেখানের নি’র্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন অভি। বলেন, ‘আমাদের ক্ষুধার্ত রাখা হতো। যখন গরম ভাত হতো। চুপ করে গরম ভাত হাত দিয়ে ধরে জাস্ট গিলে ফেলতাম, যেন কেউ না দেখতে পায়। মনে হতো গলা দিয়ে আগুন নামছে। কতটা ক্ষুধার্ত থাকলে মানুষ এমনটা করে?’
অভি বলেন, ‘খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হতো। ২০ জনের জন্য ৭-৮ ছোট কৌটায় ভরে চাল নিয়ে রান্না করা হতো। একবেলা খাবার দিতো না। যে সামান্য খাবার দেওয়া হতো তাতে কারো পেট ভরতো না। ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকতো সকলে। এতোটাই ক্ষুধার্ত রাখা হতো যে কল্পনা করা সম্ভব না। একেকজন রান্না ঘরে কলার খোসা, লেবুর খোসা চিবিয়ে খেতো। ময়লার ঝুড়িতে ফেলা মুরগির হাড় ও ভাতের মাড় খেতে। এমনকি ফেলে দেওয়া ভাতের মাড়ও তুলে খেয়েছে অনেকে।’
এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে শারীরিক নি’র্যাতন, মানসিক নি’র্যাতন ও যৌ’ন হয়রানির অভিযোগ করেন। এখানে চিকিত্সার নামে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে শারীরিক নি’র্যাতন করা হতো বলে অভি জানান। এছাড়া ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের অ্যাবিউজ করতেন মালিক বাঁধন।
এদিকে ওই নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধনকে নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর শিপনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহে বসেন বাঁধন। শিপন তার সঙ্গে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বসবাস করত। কিন্তু তাদের বিবাহের কোনো বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেনি বাঁধন। তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ উঠে এসেছে।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে সেখানে চলত মাদকের কারবার। রোগীদের থেকে পর্যাপ্ত টাকা নিলেও সে অনুযায়ী মিলত না সেবা-পরিচর্যা। চিকিৎসা কেন্দ্র হলেও সেখানে ছিল না কোনো চিকিৎসক। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত রোগীও রাখা হয়েছিল সেখানে। তবে সেবার নাম করে তাদের ওপর চলত নি’র্যাতন। এমন খবরের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালায় র্যাব-২-এর একটি দল। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করা হলে তাও পজিটিভ আসে।
অভিযানে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়ার পর র্যাব প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনিন বাঁধন, মনোয়ার হোসেন সিপন, রায়হান খান, দীপংকর শাহ দীপু ও জাকির হোসেন আনন্দকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় অভিনেতা অভিসহ ২৮ জনকে। জব্দ করা হয়েছে ৪২০ পিস ইয়াবা, নি’র্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা, খেলনা পিস্তল ও কথিত সাংবাদিকের পরিচয়পত্র।